Showing posts with label ইদের বাজার. Show all posts
Showing posts with label ইদের বাজার. Show all posts

ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে ঈদ বাজার

ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে ঈদ বাজার
ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে ঈদ বাজার


ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে ঈদ বাজার


ভয়াবহ এক ব্যাধির নাম ভারতীয় সিরিয়াল। এর কু-প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছেনা উঠতি বয়সী, তরুণী, যুবতী, গৃহবধূসহ কোমলমতি শিশুরাও। প্রতিবছর ঈদ আসলেই ধুম পড়ে যায় কেনাকাটার। সবাই নিজের ও পরিবারের পছন্দের পোশাক কিনতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে বেশির ভাগ মানুষই কয়েকটি নির্দিষ্ট নামের পোশাক কিনতে ব্যস্ত । আর এই পোশাকের নাম গুলো সব ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের। এই সিরিয়ালগুলো বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে মেয়েদের উপর এমন প্রভাব বিস্তার করেছে। আর এই সিরিয়াল প্রেমের সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। নিন্ম মানের পোশাককে সিরিয়ালের নামে ট্যাগ করে বিক্রি করছেন চড়া দামে।
পোশাক যতই নিম্নমানের হোক ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নাম ট্যাগ করলে হয়ে যায় সুপার ডুপার হিট। যদি ৫০০ টাকা মূল্যের পোশাকের নাম হয় কিরণমালা কিংবা পাখি তাহলে মেয়েরা এটা ৫০০০ টাকা দিয়েও কিনতে রাজি। কেউ নিজের পছন্দের সিরিয়ালের চরিত্রের নামে পোশাক কিনে আবার কেউ প্রতিবেশির কাছ থেকে নাম শুনে কেনায় বায়না ধরে। বিগত সময়ে এসব পোশাকের জন্য প্রানহানীর ঘটনা ঘটলেও চাহিদা কমছে না। এসব সিরিয়ালের প্রভাবে পরিবার-পরিজন কিংবা সামাজিক জীবনের দায়িত্বগুলো থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন নারীরা।বাজার এখন ছেঁয়ে গেছে কিরণমালা, পাখিসহ বিভিন্ন নামের ভারতীয় সিরিয়াল ‘মার্কা’ পোশাকে। এই বাজার পরিস্থিতি দেশীয় সংস্কৃতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে এখন ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়িকা বা মডেলদের পোশাকের দখলে রয়েছে। অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলোতে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের মডেলদের পোশাকের জন্য হুমড়ি খাওয়া ভিড়। স্টার প্লাস, জি বাংলা, স্টার জলসার মতো চ্যানেলের সিরিয়ালের চাকচিক্য, খোলামেলা আর আভিজাত্যের দর্শনে বাঙালির মাঝে এক ধরনের বিলাসিতার বাসনা সৃষ্টি করেছে। এই পোশাকগুলোর দামও কম নয়, ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে সাধারণ পরিবারগুলো যেমন বিপদে পড়ছে তেমনি পোশাক শিল্পেও দেখা দিয়েছে ধস। ঈদের নতুন কাপড়ে যোগ হয়েছে বাহারি নাম। বেশির ভাগ নামই ভারতীয় টিভি সিরিয়াল কিংবা বলিউড থেকে নেওয়া। এসব নাম দিয়েই ব্যবসায়ীরা বাগিয়ে নিচ্ছেন কাপড়ের দাম। দেশি নয়, বরং বিদেশি পোশাকের নাম রেখেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন দোকানিরা।
 ক্রেতারা বলছেন, ভিনদেশি পোশাকের যত বাহারি নামই হোক না কেন আরামদায়ক ও মান বিবেচনায় দেশি পোশাকের জুড়ি নেই।
 সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন, শুধু মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকাণ্ড এক ধরনের হীনমন্যতা। উঠতি বয়সী, তরুণী, যুবতী, গৃহবধূসহ কোমলমতি শিশুদের উপরও পড়ছে এর প্রভাব। এসব বন্ধে পোশাক সংগঠকদের পাশাপাশি সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তারা।

ক্রেতার আশায় মুখিয়ে ঈদ বাজার

ক্রেতার আশায় মুখিয়ে ঈদ বাজার

ক্রেতার আশায় মুখিয়ে ঈদ বাজার 

ক্রেতার আশায় মুখিয়ে ঈদ বাজার

ক্রেতার আশায় মুখিয়ে ঈদ বাজার


“কাস্টমারই তেমন আসেনি। বেশি দাম চাইবো কার কাছে? দাম চাইলে সোজা অন্য দোকানে চলে যায়। ভিড় বাড়লে দাম চাওয়া যায়।”

ঈদে কম বয়সী মেয়েদের কাছে থ্রি-পিস, ফতুয়ার যেমন কদর মধ্য বয়সীদের কাছে তেমনই কদর শাড়ির।

তবে এবার শাড়ির দোকানিরাও বসে আছেন ঈদের ক্রেতাদের মুখ দেখার অপেক্ষায়।

ইস্টার্ন মল্লিকার টাঙ্গাইল তাঁতঘরের ব্যবস্থাপক আবদুছ ছবুর বলেন, সাধারণত ৪-৫ রোজা থেকে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়। এবার এখনও তেমন দেখছি না। আজ তো শুক্রবার, সন্ধ্যা নাগাদ বাড়তে পারে।

“টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, দেশীয় প্রিন্ট শাড়ি পাওয়া যায় আমাদের দোকানে। এগুলোর দাম ৩৫০ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত।”

জমে উঠেছে অনলাইন ঈদের বাজার

জমে উঠেছে অনলাইন ঈদের বাজার
জমে উঠেছে অনলাইন ঈদের বাজার

জমে উঠেছে অনলাইন ঈদের বাজার 




ঢাকা: খিলগাঁওয়ের জাহানারা বেগম সারাদিন বাসায় একাই থাকেন। তার ভাষায়, একদিন হঠাৎ করে অনলাইন শপিং থেকে আমার কাছে একটি শাড়ি আসলো। শাড়ি যে নিয়ে এসেছে, সে বলে, এটা নাকি আমার ছেলে পাঠিয়েছে। আমি তো অবাক। আমার একমাত্র ছেলে চাকরি করে ঢাকার বাইরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সে কীভাবে শাড়ি পাঠবে! সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে কল দিতেই আমার ছেলে বললো, মা, ঈদে আসতে দেরি হবে, তাই অনলাইন শপ থেকে এই শাড়িটা কিনেছি তোমার জন্য। কিন্তু তোমাকে বলতে ভুলে গেছি।

প্রযুক্তির কল্যাণে এভাবেই বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। কথা বলা, গল্প করা, রাজনীতির আলাপ থেকে শুরু করে ঈদের কেনাকাটা পর্যন্ত অনলাইনে চালু হয়েছে। এবার ঈদের অনলাইন বাজার বেশ জমেও উঠেছে।

দূরত্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। প্রচণ্ড গরমে তীব্র যানজটে বসে নাকাল হওয়া, বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা কিংবা এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটা শেষে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ঘরে ফেরার দিন প্রায় শেষ হতে চলেছে।

অনলাইনের বাজারগুলোতে এখন কী না পাওয়া যায়! ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, মেয়েদের পার্টি ড্রেস, পাখি ড্রেস, ব্রাসোর থ্রি-পিস, সুতি থ্রি-পিস, পাকিস্তানি লনের রেপ্লিকা ও অরিজিনাল থ্রি-পিস, জুতা, সানগ্লাস; এমনকি ঘড়ি, টুপি, আতর, জায়নামাজসহ সবই পাওয়া যায় অনলাইন শপিং পোর্টাল গুলোতে।

অনলাইন জগতে অধিকাংশ পণ্য মূলত তরুণরাই কিনে থাকে। তরুণদের এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ গ্রাহককে ঘরে বসে কেনাকাটার এই সেবা দিতে দেশে বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে। এসব পোর্টালের বেচাকেনাও বেশ ভালো।

আজকের ডিলডটকম, এখানেইডটকম, বাংলাদেশব্র্যান্ডসডটকম, প্রিয়শপডটকম, হাটবাজার, বিক্রয়ডটকম, ওএলএক্স, সেলবাজারসহ বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল রয়েছে, যেখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকে। অনলাইন পোর্টালে গিয়ে কোনো পণ্য অর্ডার করলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনলাইন শপের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। আর অনলাইনে শপিং করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এসব মাধ্যমে প্রতিবছর লেনদেন হয় ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

আপনি যদি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ঘরে বসে কিনতে চান তাহলে এই সুবিধা পাবেন অনলাইনে কেনাকাটার সাইট বাংলাদেশ http://life-style-advice-24-bd.blogspot.com/। বাংলাদেশ ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকা হাসান বলেন, “এ সাইটটিতে রঙ, প্রবর্তনা, মেনজ ক্লাব, বিবিআনা, স্মার্টেক্স, অহং, ল্যাভেন্ডার একসট্যাসিসহ ৬৪টি ব্র্যান্ডের পোশাক কেনা যাবে। বর্তমানে আমাদের এ সাইটে অন্যান্য পণ্য বাদে শুধু পোশাক রয়েছে ৬০ হাজার । ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন পণ্য যুক্ত করেছে।”

বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ছাড়াও ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে এ সাইট থেকে পণ্য কেনা যাবে। গত মাসে এই সাইট থেকে ১৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হলেও এই মাসে আরও বেশি বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য বিভিন্ন সাইট থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলেও অনেকে পণ্য বিক্রি করছেন। শৌখিন ফ্যাশন Showkhin Fashion ও http://life-style-advice-24-bd.blogspot.com/ অনলাইনে পণ্য বিক্রির তেমনি দুটি পেজ।

শৌখিন ফ্যাশন গত বছর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই পেইজে লাইক এখন ২৫ হাজার। শৌখিন ফ্যাশনের প্রধান নির্বহী পরিচালক ইমরান খান বলেন, “আমাদের এখানে ইন্ডিয়া থেকে আনা আনস্টিচ বা সেলাই বিহীন ফ্লোরটাচ আনারকলি, পার্টি ড্রেস, ব্রাসোর থ্রি-পিস, সুতি থ্রি-পিস সহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যায়।

আর ঈদকে সামনে রেখে সদ্যই শুরু করা ড্রিম টাচের পেইজে লাইক ২০০। এর স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান সুজন বললেন, দিন দিন অনলাইনে বেচাবিক্রি বাড়ছে, তাছাড়া শোরুম দিয়ে ব্যবসা শুরু করার তুলনায় এখানে ব্যবসা করা অনেকটা সহজও। আমরা প্রধানত মেয়েদের জামা এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। মাত্রই শুরু করলেও আমাদের বিক্রি আশা ব্যাঞ্জক।” 

অনলাইনের ক্রেতারা জামা-কাপড়, জুতা, ঘড়ি কিংবা গৃহস্থালি জিনিস যাই কিনুন না কেন, ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে বা গ্রাহক পণ্য হাতে পাওয়ার পর দাম মেটানোর সুযোগও রয়েছে। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও পরিশোধ করছেন মূল্য।

এছাড়া মূল্য পরিশোধে ব্যাংকের সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছে। তাই ক্রেডিট কার্ডে কেনার বাধ্যবাধকতা নেই। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সুবিধা থাকলেও কিছু অসবিধাও আছে আর তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্রেতারা অভিযোগ করে থাকে, পছন্দ করে অর্ডার করা পণ্যের সাথে হাতে পাওয়ার পণ্যের মিল নাই।

ভারতীয় পোশাকের দখলে ঈদের বাজার

ভারতীয় পোশাকের দখলে ঈদের বাজার

ভারতীয় পোশাকের দখলে ঈদের বাজার

ভারতীয় পোশাকের দখলে ঈদের বাজার


ভারতীয় পোশাকের দখলে ঈদের বাজার


এবার ঈদের কাপড়ের বাজারের ৭০ ভাগই দখল করে নিয়েছে বিদেশি পোশাক। এর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে ভারত। বিদেশি শাড়ি ও থ্রিপিসের প্রায় সবই ভারতের। আর কিছু থ্রিপিস আসে পাকিস্তান থেকে। অন্যদিকে গেঞ্জি, টি-শার্ট ও জুতোর বাজার দখল করে আছে চীন। এছাড়া থাইল্যান্ড ও দুবাই থেকে কিছু কাপড় এসেছে। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব মার্কেট, শপিংমলে এসব কাপড়ই বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় শপিংমল, ওয়ানস্টপ মল ও অভিজাত এলাকার বুটিক শপগুলোতে দেশি কাপড় প্রায় নেই বললেই চলে। সরেজমিন ঘুরে এবারের ঈদবাজারের এসব তথ্য জানা যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর ঈদের অর্ধেক দেশি ও অর্ধেক বিদেশি কাপড় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার গতবারের চেয়ে শতকরা ২৫ ভাগ বেশি কাপড় আমদানি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদেশি কাপড়ের বিক্রি গত ঈদের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ বেশি বেড়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিভিন্ন ব্যাংকের কম সুদে উত্সব লোন সুবিধা, শুল্ক না বাড়া ইত্যাদি কারণে কাপড় বেশি আমদানি করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া চোরাই পথেও আসছে অনেক ভারতীয় কাপড়। যদিও কুমিল্লাসহ দেশের সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে সম্প্রতি কোটি কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস উদ্ধার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানাভাবে ভারতীয় কাপড় দেশে ঢুকছে।
ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. হেলালউদ্দিন বলেন, এবার ঈদের কাপড়ের শতকরা ৭০ ভাগই বিদেশি। বিশেষ করে শাড়ি-থ্রিপিসসহ মেয়েদের কাপড়ের অধিকাংশই ভারতের। এসব কাপড়ের চাহিদাও সর্বাধিক। আর ছেলেদের গেঞ্জি ও জুতোর প্রায় সবই চীনের। যেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টের কাপড় ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ পরছে, পোশাকখাত থেকে জাতীয় রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে। সেখানে এ দেশের ঈদের কাপড়ের বাজার দখল করে আছে ভারত। এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. হেলালউদ্দিন বলেন, আমাদের গার্মেন্ট শিল্প থেকে যে সাইজের ও মানের কাপড় রফতানি করা হয় সেগুলো এ দেশের মানুষের উপযোগী নয়। কারণ ইউরোপীয় মানুষের শারীরিক গঠন অনুযায়ী গার্মেন্টে কাপড় তৈরি করা হয়। এ দেশের মানুষের জন্য যেসব গার্মেন্ট কারখানা কাপড় তৈরি করে সেগুলো পুরো চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
এছাড়া সুতি কাপড়ের মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। কিন্তু জর্জেটের মতো সিনথেটিক কাপড়ের মান এখন পর্যন্ত ভালো করতে পারেনি। এদিকে ঈদে সবাই সিনথেটিক ও জমকালো কাজের কাপড় বেশি পছন্দ করে। যার কারণে বিদেশি কাপড়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। তাছাড়া এ দেশের মানুষের মধ্যে বিদেশপ্রীতি রয়েছে। এ দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রায় সবাই বিদেশি কাপড় পরেন। তাদেরই অনুসরণ করে সবাই। এছাড়া ভারতীয় চলচ্চিত্র ও বিভিন্ন সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকারা যেটা পরেন সেটাই কিনতে চান এ দেশের মানুষ।
এলসির মাধ্যমে আমদানি করে এনে সারাদেশে বিদেশি কাপড় সরবরাহের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে গাজী ভবন শপিং সেন্টার ও পলওয়েল মার্কেট। পাইকারি বাজার হলেও খুচরা ক্রেতারও কমতি নেই এখানে। এ দু’টি মার্কেটে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশি কাপড় কিনতে অসংখ্য ক্রেতা ভিড় জমিয়েছেন। কাপড়ের স্তূপ ও ক্রেতার ভিড়ে মার্কেট দু’টির ভেতর চলাচল করাই কষ্টদায়ক। বেশিরভাগ দোকানেই ঢোকার উপায় নেই। ভিড়ের কারণে বাইরে দাঁড়িয়েই কাপড় পছন্দ করছেন। বিক্রেতাদেরও দম ফেলার ফুরসত নেই। ক্রেতাদের চাপেই খুচরা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এভাবে পাইকারি ও খুচরা সমান তালে বিক্রি চলবে বলে জানান তারা।
প্রায় ২০ বছর ধরে কাপড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গাজী ভবন শপিং সেন্টারের জেএস এন্টারপ্রাইজ ও বুশরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আহমেদুল কবির জাকির বলেন, এ বছর অন্যবারের চেয়ে বিদেশি কাপড়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই এর পাইকারি বিক্রিও শুরু হয়েছে আগেভাগে। শবেবরাত থেকেই এখানে ঈদের কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, ইস্টার্ন প্লাজা, মাসকট প্লাজাসহ রাজধানীর সব বড় বড় মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কাপড় কিনে নিয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া, খুলনাসহ দেশের সব অঞ্চলের বড় ব্যবসায়ী এসেও কাপড় কিনে নিয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজী ভবনে ১৫০টি ও পলওয়েল মার্কেটে প্রায় ৫০০টি দোকান রয়েছে। এই মার্কেটের সব ব্যবসায়ীই ভারত, পাকিস্তান, চীন, দুবাই ও থাইল্যান্ড থেকে কাপড়, জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি এলসির মাধ্যমে আমদানি করে আনেন। পরে এখান থেকে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারিভাবে কাপড় কিনে নিয়ে যান। এ দু’টি মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ীই আবার কেরানীগঞ্জে আলাদা শোরুম করেছেন। আমদানি করা কিছু কাপড় তারা সেখানে নিয়ে যান। সেখান থেকেই পাইকারিভাবে বিক্রি করেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত শতকরা ৬০ ভাগ বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০ রোজার মধ্যে বাকিটা সম্পন্ন হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে স্বল্প বিনিয়োগের ব্যবসায়ীরা ঈদের দু’দিন আগ পর্যন্ত পাইকারিভাবে কাপড় নিয়ে যান।
এছাড়া বিভিন্ন শপিংমলের বড় কাপড় ব্যবসায়ীরা নিজেরাও এলসি খুলে কাপড় আমদানি করেন। গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড, বাসাবী, জারা, নাবিলা ইত্যাদি বড় বড় ওয়ানস্টপ মলের মালিকরাও বিভিন্ন দেশে গিয়ে পছন্দ করে মানসম্পন্ন কাপড় আমদানি করেন। যার কারণে তাদের আনা কাপড়ের দাম অনেক বেশি। এসব শোরুমে দেশি কোনো কাপড় থাকে না।
গাজী ভবন ও পলওয়েল মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এত বেশি কাপড় আনেন যে, মান, নকশা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না। গড়ে পণ্য কিনে আনেন। এগুলোর পাইকারি দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। পাইকারিভাবে কাপড়ের দাম ৪৮০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই কাপড়গুলোই ক্রেতা বুঝে এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত লাভে বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিদেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি হলেও মানের দিক দিয়ে এখন বাংলাদেশের কাপড় অনেক ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি কাপড়ের মান অনেক খারাপ থাকে। তারপরও শুধু বিদেশি হওয়ার কারণেই ক্রেতারা সেটা কিনে নেন।
দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগঠন ফ্যাশন উদ্যোগের সদস্য ও বুটিক হাউস অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশে এখন এত বেশি কাপড় তৈরি হচ্ছে যে বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন নেই। ক্রেতাদের বিদেশি কাপড় পরার প্রতি আগ্রহের কারণেই মূলত এখন ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন। এ আমদানি করা কাপড়গুলো ভারত বা অন্য যে কোনো দেশের হোক না কেন সেগুলো সেখানকার পাইকারিভাবে তৈরি করা। এগুলোর দাম খুব বেশি না হলেও বিক্রেতারা ধনী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আসল দামের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করেন। বিদেশের ডিজাইনারদের তৈরি কাপড় সাধারণত আমদানি করা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ফ্যাশন হাউসগুলোতে যেসব কাপড় বিক্রি হয় সেগুলো সবই ডিজাইনারদের তৈরি। তারপরও ডিজাইনারদের ও পাইকারিভাবে তৈরি কাপড়ের দামের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ টাকার বেশি পার্থক্য হয় না। ঈদের কাপড়ের শতভাগ যেন দেশের হয় সেই চিন্তা করেই ফ্যাশন হাউসগুলো স্থানীয় পাইকারি বাজারের চেয়ে খুব বেশি দাম নির্ধারণ করে না। কিন্তু বাংলাদেশের আশপাশেরসহ বিশ্বের সব উন্নত দেশেই ডিজাইনারদের কাপড়ের দাম পাইকারিভাবে তৈরি পণ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।