রোজার সময় পাঁচটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
ফারজানা খানম শিমুল
সংযম পালন মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করে, রুচিকে পরিশীলিত করে, ভালো কাজ করার জন্য প্রণোদনা দেয়, সুস্থ মানস ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। কষ্ট সহ্য করার শক্তি, ধৈর্যশক্তি ও সংযম-এ গুণাবলি মানুষ অর্জন করে উপবাস চর্চায়। ভালোভাবে রোজা রাখতে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি।
১. হতে হবে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে যত্নশীল
রোজা নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভাবনার শেষ নেই। রোজায় সেহরি, ইফতার ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মানুষের মনে এ সময়ে থাকে অনেক জিজ্ঞাসা। এবার দিন বড় হওয়ায় রোজাও রাখতে হচ্ছে অনেকক্ষণ, প্রায় ১৬ ঘণ্টা অভুক্ত অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। আর এই মাসে পানাহার থেকে বিরত থাকলেও আমরা সেহরির সময় কম আর ইফতারের সময় অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলি। এতে বেশ কিছু রোজা পার হলেই অনেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। কারণ রোজা রাখা অবস্থায় নিয়মিত কাজকর্মও করতে হয়। তবে আমরা যদি খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে যত্নশীল হই, তাহলে হয়তো অনেক সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করতে পারব।
২. মানসিক এবং ধর্মীয় বিশ্বাস
রমজানের এই সময়টিতে স্বভাবতই আমাদের দেহঘড়ির খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। এ ছাড়া আবহাওয়া ও শারীরিক অবস্থার কারণে রোজা রাখতে গিয়ে অনেকে নানা রকম সমস্যায় পড়েন। যদিও মানসিকভাবে শক্ত থাকলে এবং মনে ধর্মীয় বিশ্বাস থাকলে এসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা যায়। তবে রোজার এই সময়টিতে কারো খাদ্যাভ্যাস যেন তার জন্য সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য খানিকটা সতর্কতারও প্রয়োজন রয়েছে।
৩. খাবার ও খরচে সংযম
রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। রমজানে আমাদের খাবার কম হওয়া উচিত। খরচ কম করা উচিত। সেখানে রমজানে আমাদের প্রত্যেকের খাবারের খরচ বেড়ে যায়। এই এক মাস আমরা যেন খাবারের প্রতিযোগিতায় নেমে না যাই।
৪. সঠিকভাবে খাদ্য নির্বাচন
রোজা পালন করতে গিয়ে অনেকে শঙ্কিত বোধ করেন, যদি তাঁদের কোনো অসুস্থতা থাকে। তবে যদি রোগ বুঝে খাওয়া হয়, তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। আবার যাদের কোনো অসুস্থতা নেই, তারাও যদি সঠিকভাবে খাদ্য নির্বাচন করে খান তাহলে তারাও নির্বিঘ্নে এক মাস রোজা রাখতে পারেন। আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে রমজানে যে খাদ্যাভ্যাস লক্ষ করা যায়, তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ সময়ে খাবারের প্রধান পর্যায় দুটি। সেহরি ও ইফতার। আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের অধিকাংশ খাবারই হচ্ছে চর্বিসমৃদ্ধ এবং তেলে ভাজা। সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখা হয় না। কিন্তু এসব দিকে নজর দিতে হবে।

৫. খেতে হবে অল্প পরিমাণে
সারা দিন না খেয়ে থাকার কারণে অনেকে মনে করেন ইফতারে বেশি করে না খেলে শরীর টিকবে না। আসলে শরীর ঠিক থাকবে পরিমিত ও সুষম খাবারের মাধ্যমেই, বেশি খাওয়ার মাধ্যমে নয়। প্রয়োজনের তুলনায় যত বেশি খাবার খাওয়া হবে, ততই এর কুফল ভোগ করতে হবে। কারণ ইফতারি ও সেহরিতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেলে ক্ষুধার ভাব বেশি লাগে। যদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে ক্ষুধাটা অত তীব্র হয় না। ইফতার ও সেহরিতে খুব বেশি পরিমাণে খেলে দিনের বেলায় ক্ষুধার তীব্রতা বাড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে বমি, পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, পেট ফাঁপা, মাথা ধরা প্রভৃতি। সারা দিন রোজা রাখার পরে ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি খেলে যেমন শরীরের ওজন বেড়ে যায়, তেমনি হজমেও গোলমাল হতে পারে।
লেখক : প্রধান প্রশিক্ষক ও ইনচার্জ, পারসোনা হেলথ